আরেকটা বিষয় খেয়াল করলে দেখবেন, আল্লাহ আমাদের জন্য সুচিন্তিতভাবে কিছু কর্মপরিকল্পনা দিয়ে দিয়েছেন। আমরা যদি সঠিকভাবে সেগুলো অনুসরন করি, তাহলে আমাদের জীবনে সমস্যা অনেক কমে যাবে। যেদিন থেকে আমি নামাজ আদায় করা শুরু করলাম, সেদিন থেকে আমার জীবন বদলে গিয়েছিল। আপনি যদি বুঝে শুনে, আন্তরিকতা ও মনোযোগ নিয়ে নামাজ পড়েন, দেখবেন নামাজ আপনার জীবনকে বদলে দিয়েছে।
আমার নিজের কথাই বলি। নামাজ শুরু করার পর থেকে মাদক নেয়া ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমি জানতাম না, এটা হারাম। আমি কুরআনে পড়েছিলাম, তোমরা নেশাগ্রস্থ অবস্থায় নামাজে দাড়াবে না। প্রথম প্রথম ইশার নামাজ খুব দ্রুত পড়ে নিতাম। তারপর রাতের দিকে সিগারেটের সাথে মাদক নিতাম। আমাকে পরের দিন ফজরের জন্য খুব ভোরে উঠতে হতো। সেজন্য রাতে ঘুমাতাম তাড়াতাড়ি।
এভাবে নামাজের সময়ের দিকে খেয়াল রাখতে গিয়ে আমার মাদক নেয়া অনেক কমে গিয়েছিল। একসময় আমি ভাবলাম, নামাজ আর মাদক দুটো একসাথে চলতে পারে না। সিদ্ধান্ত নিয়ে একদিন আমি মাদক পুরোপুরি ছেড়ে দিলাম। আলহামদুলিল্লাহ।
পরিপূর্ণ নামাজ আদায় আমাকে আরও অনেক হারাম থেকে বাঁচিয়েছে। আমার বান্ধবী আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল। আমি তাকে বললাম, “দেখ, আমি খুব সিরিয়াসলি ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করার চেষ্টা করছি। আমি তোমার সাথে এক কক্ষে থাকতে পারি না। তুমি, এখানে থাক। আমি অন্য বিছানায় ঘুমুতে গেলাম। বিয়ে ছাড়া আমাদের আর একসাথে থাকা সম্ভব নয়। আর আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারি না, যদি না তুমি জেনে বুঝে ইসলাম কবুল কর।
আমার মা একজন ক্যাথলিক খ্রিষ্টান হওয়া সত্ত্বেও, আমার এই আলাদা থাকার সিদ্ধান্তে বড় অবাক হয়েছিলেন।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা, এই ছিল আমার ইসলামে আসার ঘটনা। আপনারা হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, ইসলামে এসে আমার অনুভূতি কী? আমার বিশেষ কোনো যোগ্যতা নেই। আমি অনুভব করি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার বিশেষ অনুগ্রহে আমাকে মুসলিম হিসেবে কবুল করেছেন। ইসলাম আমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া বিরাট রহমত।
একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝাই।
ধরুন আপনি একটা রুমে এলেন।রুম ভর্তি দামি দামি আসবাবপত্র। চারদিক খুব কারুকার্যময়। কিন্তু রুমটা অন্ধকার। আপনি এলোমেলো হাঁটছেন, অথচ পথ খুঁজে পাচ্ছেন না। হাতড়ে হাতড়ে পথ চলতে গিয়ে আপনি টেবিল চেয়ারের সাথে ধাক্কা খাচ্ছেন, ব্যথা পাচ্ছেন। হঠাৎ করে আপনার সামনে আলো জ্বলে উঠল। সেই রুমের সুন্দর দৃশ্য, আলোকিত পথ আপনার সামনে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল।
ইসলাম গ্রহণের পর মনে হলো, আমি যেন অন্ধকারে এলো মেলো হাঁটছিলাম, দিশা পাচ্ছিলাম না। ইসলাম আলোর মশাল হয়ে আমার আশেপাশের সব আলোকিত করে দিল। আমার সামনে এখন সব পরিষ্কার, আলোয় আলোকিত।
এটা যেন ঠিক জীবিত আর মূতের মধ্যকার পার্থক্যের মতো। ইসলাম আপনার মনের অভ্যন্তরে প্রশান্তি এনে দেয়, যা আর অন্য কিছুতেই সম্ভব নয়।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা আজ এই পর্যন্তই। একটু পরেই প্রশ্ন উত্তর সেশন শুরু হবে। চেষ্টা করব, আপনাদের মনের কিছু জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে।
প্রশ্ন : মুসলিম হবার জন্য কী প্রয়োজন? আব্দুর রহিম গ্রিন : চমৎকার প্রশ্ন। অনেকেই আছেন যারা মুসলিম হতে চান কিন্তু সাহস পান না। জানি না তারা কী ভাবেন? হয়তো ভাবেন, মুসলিম হয়ে গেলে কঠিন কঠিন সব নিয়ম মানতে হবে।
আসলে বিষয়টা খুবই সহজ। মূলত ইসলাম গ্রহণ করা মানে কিছু মৌলিক বিষয় মনে-প্রাণে মেনে নেয়া। মেনে নেয়া, আল্লাহ এক, তার কোনো অংশীদার নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর রাসূল। প্রথমত: আপনি মনে-প্রাণে এই কথাগুলো মেনে নিবেন। এরপর আপনি কিছু মুসলিম ব্যক্তির সামনে শাহাদাহ উচ্চারণ করে, তাদেরকে সাক্ষী রেখে এই কথাগুলো মেনে নেয়ার স্বীকৃতি দিবেন।
উপস্থিত লোকদের সামনে শাহাদাহ উচ্চারণের সাথে সাথে আপনি মুসলিম হয়ে গেলেন। এরপরে আপনার করণীয় হলো, গোসল করে পরিষ্কার কাপড় পরা। ধীরে ধীরে আপনি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়ার নিয়ম শিখে নিবেন, যাতে তা নিয়মিত পড়তে পারেন।
এমন নয় যে, আপনি একদিনেই সব শিখে ফেলবেন। তার জন্য সময়ের প্রয়োজন। ধীরে ধীরে আপনি চেষ্টা করবেন ইসলামের বিভিন্ন নিয়মকানুন জানার ও মানার। ব্যস! মুসলিম হবার জন্য এটাই যথেষ্ট।
প্রশ্ন : আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার উপর বিশ্বাস রাখাই যথেষ্ট, নাকি আমল করাও জরুরি?
আব্দুর রহিম গ্রিন : খুব সুন্দর প্রশ্ন করেছেন। আমরা বলি আমাদের ঈমান থাকা জরুরি। আমরা ঈমানের অনুবাদ করি ‘বিশ্বাস। এক ভাষা থেকে আরেক ভাষায় অনুবাদের কিছু অসুবিধা আছে। অনুবাদ করে কখনোই মূল বাক্যের পুরো ভাব ও অর্থ বুঝানো যায় না। ইসলামে মূলত ঈমান বলতে বোঝায় অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন, মুখে স্বীকৃতি ও কাজে বাস্তবায়ন। আল্লাহর আনুগত্য করার মধ্য দিয়ে ঈমান বাড়ে। আল্লাহর দেয়া বিধি-নিষেধ অমান্য করলে ঈমান দিনে দিনে কমে।
সুতরাং বিশ্বাস এমনই একটা জিনিস, আপনি যদি মনে-প্রাণে তা মেনে নেন, আপনার কাজে-কর্মে তার প্রতিফলন ঘটবেই। আমাদের নবিগঞ্জ এক হাদিসে বলেছেন, আল্লাহর কসম সে লোক মুমিন নয়, যার হাত ও মুখের অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশীরা নিরাপদ নয়। তার মানে কী? তার মানে নবি ও বলছেন, যে। ব্যক্তি মুমিন, তার চরিত্র এরকম হতে পারে না। অন্য এক হাদিসে তিনি বলেছেন, “মুমিনের মাঝে আর যাই দোষ থাকুক না কেন, মুমিন কখনো মিথ্যাবাদী হতে পারে না।
তার মানে বোঝা গেল- যিনি বিশ্বাসী, যিনি মুমিন, তার চরিত্রে এই ধরনের ত্রুটি থাকতে পারে না।
আরেক হাদিসে তিনি বলেছেন, মুনাফিকের লক্ষণ চারটি। (১) যখন কথা বলে তখন মিথ্যা বলে, (২) যখন কোনো ওয়াদা করে, তখন তা ভঙ্গ করে, (৩) তার কাছে কোনো আমানত রাখা হলে তা খেয়ানত করে এবং (৪) যখন তর্ক করে তখন খুবই উগ্র আচরণ করে।
সুতরাং যার মধ্যে এই চারটি ক্রটির কোনো একটি থাকে, তার মধ্যে মুনাফিকের লক্ষণ আছে। আর যার মধ্যে এই চারটি গুণের সবগুলোই আছে, সে পরিপূর্ণ মুনাফিক। মুনাফিক হলো সেই ব্যক্তি, যার অন্তরে এক, বাইরে আরেক। কেউ যদি বলে থাকেন তিনি আল্লাহকে বিশ্বাস করেন, তবে অবশ্যই কাজে তার প্রতিফলন থাকবে। মুখে বলছেন বিশ্বাস করি, কাজে কর্মে বোঝার উপায় নেই; এমন হলে তিনি খাটি মুমিন নন। তার বিশ্বাস করার দাবি এক ধরনের মুনাফিকি।
আপনাদের একটা উদাহরণ দিই। ধরুন, আমরা যেখানে বসে আছি, সেখানে এক ভাই চিৎকার শুরু করল ‘আগুন, আগুন। আপনারা কী করলেন? আপনারা যার যার আসনে বসে রইলেন আর বললেন, “ও আচ্ছা। তার মানে কী বোঝা গেল? নিশ্চয় আপনারা সেই ভাইয়ের কথা বিশ্বাস করেননি। ভাবছেন তিনি একটু মজা করেছেন। যদি সত্যি সত্যি আপনারা তার কথা বিশ্বাস করতেন, তবে কী করতেন? আপনারা কি দ্রুত দৌড় দিয়ে এখান থেকে বেরিয়ে যেতেন না?
এটাই বাস্তবতা! বিশ্বাস এমনই এক জিনিস, যা আপনার কাজে-কর্মে প্রকাশ পাবে। এজন্যই অনেক বিজ্ঞ আলেম বলে থাকেন, দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত না পড়া কুফরি। এটা অনেকটা ইসলাম ত্যাগ করার স্বীকৃতি দেয়ার মতো।
কারণ, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, “ঈমান আর কুফরের মাঝে পার্থক্য হলো নামাজ। যে লোক নামাজ ছেড়ে দিল, সে কুফরি করল। আপনি দেখবেন, অনেকেই আছেন, যারা কথায় কথায় বলে আমি মুসলিম। মুসলিম বলতে আসলে তিনি কী বুঝাচ্ছেন? মূলত মুসলিম বলতে তিনি বুঝাচ্ছেন, তিনি কোনো দেশের, কোনো সংস্কৃতির মানুষ। তারা মুসলিম বলতে বোঝান, তারা পাকিস্তানি কিংবা সোমালি কিংবা বাংলাদেশি ইত্যাদি। একটা মজার কথা বলি। বসনিয়ার মুসলিমদের কথা মনে আছে তো? সেই যে সার্বরা তাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন, নিপীড়ন আর গণহত্যা চালিয়েছিল। বসনিয়ার মুসলিমদের মধ্যে বেশিরভাগই আমলের দিক দিয়ে খুবই দুর্বল ছিল। একবার এক সাক্ষাৎকারে বসনিয়ার সেনাবাহিনীর এক মুসলিম সদস্য বলেছিলেন ‘দেখুন, আমি মুসলিম ঠিকই, তবে আমি আল্লাহ খোদায় বিশ্বাস করি না। আমি মূলত নাস্তিক।
আগের অংশ টুকু পড়তে[এখানে ক্লিক করুন]পরের অংশ টুকু পড়তে[এখানে ক্লিক করুন]