কুরআন ও সুন্নাহের ওপর আরোপিত বিভিন্ন প্রশ্নের জাওয়াব
অনুবাদক: জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের।। সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
আল্লাহ তা‘আলা বাণী:﴿وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ يَدۡعُونَ ١٠٤﴾ [ال عمران: ١٠٤] আল্লাহ তা‘আলার অপর বাণী: ﴿لَا يَضُرُّكُم مَّن ضَلَّ إِذَا ٱهۡتَدَيۡتُمۡۚ ١٠٥﴾ [المائدة: ١٠٥] যদি তোমরা সঠিক পথে থাক তাহলে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ১০৫]
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলা বাণী:﴿وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلۡخَيۡرِ وَيَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٠٤﴾ [ال عمران: ١٠٤] “আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৪] এর মধ্যে এবং আল্লাহ তা‘আলার অপর বাণী: ﴿لَا يَضُرُّكُم مَّن ضَلَّ إِذَا ٱهۡتَدَيۡتُمۡۚ ١٠٥﴾ [المائدة: ١٠٥] “যদি তোমরা সঠিক পথে থাক তাহলে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।” [সূরা মায়েদাহ, আয়াত: ১০৫] ও হাদীস— «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ المُنْكَرِ أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللَّهُ أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُونَهُ فَلَا يُسْتَجَابُ لَكُمْ» : هَذَا حَدِيثٌ حَسَن —“ঐ স্বত্বার শপথ যার হাতে আমার জীবন তোমরা ভালো কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজে মানুষকে বাধা প্রদান করবে অন্যথায় আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের পক্ষ থেকে অচিরেই তোমাদের ওপর আযাব প্রেরণ করবে। অতঃপর তোমরা তাকে ডাকবে তখন তোমাদের ডাকে সাড়া দেবে না[1]।” এবং অপর হাদীস—«مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ المَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ» “মানুষের ইসলামের সৌন্দর্য হলো অনর্থক কথা-বার্তা ছেড়ে দেওয়া”[2]—এর মধ্যে বিরোধ নিরসন কীভাবে? আপনার প্রতি আল্লাহ দয়া করুন। আমি জানি আয়াতের অর্থের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। অনুরূপভাবে বিশুদ্ধ সুন্নাতের মধ্যেও কোন বিরোধ নেই। এ কারণে আমি এ কথা বিশ্বাস করি যে, জ্ঞানের অভাব ও অক্ষম হওয়ার কারণে ভুল আমারই হয়ে থাকে। আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন। এর উত্তর কি?
উত্তর— আয়াতে কোথাও শক্তি-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কর্মে বাঁধা দেওয়াকে ছেড়ে দেয়ার কথা নেই। আয়াতের বর্ণনা দ্বারা একজন বান্দাকে আত্মার পরিশুদ্ধির কথা বলা হয়েছে এবং ভালো কর্ম করার চেষ্টার কথা বলা হয়েছে। আর নিজেকে সংশোধন করা ও ভালো করার মধ্যে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কর্মে বাধা দেওয়াও রয়েছে। যখন কোন বান্দা তার ওপর যা ওয়াজিব তা আদায় করবে তখন সে যদি আল্লাহ তাকে যা নির্দেশ দিয়েছে তা পালন করার পর যে গোমরাহ হবে সে তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। ইমাম আহমদ বিশুদ্ধ সনদে কাইস থেকে বর্ণনা করেছেন— قَالَ قَامَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّكُمْ تَقْرَءُونَ هَذِهِ الْآيَةَ { يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ لَا يَضُرُّكُمْ مَنْ ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ } وَإِنَّا سَمِعْنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوْا الْمُنْكَرَ فَلَمْ يُنْكِرُوهُ أَوْشَكَ أَنْ يَعُمَّهُمْ اللَّهُ بِعِقَابِهِ “আবূ বকর দাঁড়ালেন অতঃপর আল্লাহর প্রশংসা ও শুকরিয়া আদায় করলেন। তারপর বললেন, হে মানুষ! তোমরা অবশ্যই এ আয়াত তিলাওয়াত কর। আর তোমরা আয়াতটিকে এমন ক্ষেত্রে প্রয়োগ কর যেটি তার প্রয়োগের স্থান নয়। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, মানুষ যখন কোন অপকর্ম সংঘটিত হতে দেখে তা পরিবর্তন না করে, আল্লাহর শাস্তি তাদের গ্রাস করতে পারে[3]।” মনে রাখবে একজন বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব—সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কর্মে বাঁধা দেওয়া সাধ্য অনুযায়ী আদায় না করবে সে পরিপূর্ণ হিদায়াতপ্রাপ্ত হতে পারবে না। আল্লাহই একমাত্র তাওফীক দানকারী।
ফত্ওয়া ও ইলমী গবেষণা বিষয়ক স্থায়ী সংস্থা।
[1] তিরমিযি হাদীস নং ২১৬৯
[2] তিরমিযি, হাদীস নং ২৩১৮
[3] ইবনু মাযা, হাদীস নং ৪০৫